বিখ্যাত মুসলিম চিকিৎসা বিজ্ঞানী- ইবনে জহুর
ইবনে জহুর
(১০৯৫-১১৬২)
১০৯৫
সালে তৎকালীন আন্দালুসিয়ার (বর্তমান স্পেন) সিভাইল অঞ্চলে সম্ভ্রান্ত বানু জহুর গোত্রে
জন্মগ্রহণ করেন আবু মারওয়ান
আবদুল মালিক ইবনে আবি আল
আলা ইবনে জহুর (সংক্ষেপে
ইবনে জহুর)। বানু
জহুর মূলত আরব দেশের
প্রসিদ্ধ গোত্র ছিল, যার একটি
অংশ ইসলাম প্রচারের সময় আন্দালুসিয়া (স্পেন)
গমন করে এবং সেখানেই
স্থায়ী হয়। ইবনে জহুরের
জন্মের প্রায় ১০০ বছর আগে
থেকেই এই বানু জহুর
গোত্র থেকে বহু ডাক্তার,
কবি, বিচারক, প্রশাসক, পরামর্শক, রাজ্যের সভাসদ, সেবিকা আত্মপ্রকাশ করে এবং স্ব-স্ব ক্ষেত্রে প্রতিভার
স্বাক্ষর রাখে। তাই ইবনে জহুরের
পূর্ববর্তী ছয় বংশ (জেনারেশন)
প্রতিভাবান পেশাজীবীদের আঁতুড়ঘর বলে বিবেচিত হতো।
এই ১০০ বছরজুড়েই রাজ্যের
এবং প্রশাসকদের চিকিৎসার মূল দায়িত্ব বানু
জহুর গোত্রের চিকিৎসকদের ওপর ন্যস্ত ছিল।
আরব
বিশ্বের প্রাচীন প্রথা অনুসারে ছোটবেলায় ইবনে জহুর ধর্মীয়
শিক্ষা ও সাহিত্য রপ্ত
ও চর্চা করতে থাকেন। পরবর্তীতে
বাবা আবুল আলা জহুরের
হাত ধরে তিনি চিকিৎসা
বিষয়ে জ্ঞান অর্জন শুরু করেন। ইবনে
জহুরের নিজের ভাষ্য অনুসারে তার পিতা তাকে
প্রখ্যাত রোমান চিকিৎসক গ্যালেন এবং ‘ফাদার অব
মেডিসিন’ খ্যাত গ্রিক চিকিৎসক হিপোক্রেটসের চিকিৎসা পদ্ধতির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। এ ছাড়াও
চিকিৎসাসেবায় ব্রত থাকার লক্ষ্যে
‘হিপোক্রেটিক ওথ’ নামক শপথ
বাক্য পাঠ করান।
চিকিৎসাশাস্ত্রে
যথাযথ জ্ঞান লাভের পর তিনি মরক্কোর
‘আলমোরাভিদ’ সাম্রাজ্যে প্রধান ও রাজকীয় চিকিৎসক
নিযুক্ত হন। তবে রহস্যজনক
কারণে তিনি রাজপরিবার ছেড়ে
জন্মভূমি সিভাইল চলে আসেন। এতে
মরক্কোর ক্রুদ্ধ শাসক আলী বিন
ইউসুফ বিন তাসুফিন তাকে
গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠান।
১১৪০ থেকে ১১৫৭ সাল
অর্থাৎ ৭ বছর কারাভোগের
পর তিনি মুক্তি পান
এবং নিজ ভিটায় চিকিৎসাসেবায়
মনোনিবেশ করেন। তার রচিত বেশ
কিছু বই চিকিৎসাবিজ্ঞানে কালজয়ী
রূপে বিবেচিত। এর মধ্যে ‘কিতাব
আল ইকতিসাদ’, ‘কিতাব আল আঘাধিরা’ ‘কিতাব
আল তায়সির’ বিশেষভাবে প্রসিদ্ধ।
ইবনে
জহুর দেহ ও ত্বকের
সৌন্দের্যের জন্য বিভিন্ন চিকিৎসাব্যবস্থা
এমনকি প্লাস্টিক সার্জারির মাধ্যমে লম্বা নাক, মোটা ভ্রু
এবং আঁকাবাঁকা দাঁত ঠিক করার
কথা বলে গেছেন। বিভিন্ন
প্রকার খাবার বিশেষত পুষ্টিকর খাবার, ফলমূল, মিষ্টি প্রভৃতির প্রতিক্রিয়ার কথাও তার রচনায়
ওঠে আসে। খাদ্য হিসেবে
সিংহ, সাপ ও বন্য
পশুসহ বিভিন্ন জীবজন্তুর গোশত গ্রহণ এবং
তার প্রতিক্রিয়া তুলে ধরেন ইবনে
জহুর। বিভিন্ন ঋতুতে কী খাবার গ্রহণীয়
কিংবা বর্জনীয়, সেই তথ্য রয়েছে
তার রচনায়। জীবনের শেষপ্রান্তে তিনি ৩০ খন্ডে
চিকিৎসাবিজ্ঞানে ইনসাইক্লোপিডিয়া লিখে গেছেন। প্রায়
হাজার বছর আগে তিনি
ক্যান্সারের পূর্বাভাস দিয়েছেন এবং স্যালাইনের মাধ্যমে
দেহে খাদ্য উপাদান বা পানীয় প্রয়োগের
প্রথা চালু করেন। তিনি
বিভিন্ন ধরনের চর্মরোগ বিশেষত শ্বেতরোগ, ত্বকের ঘা নিয়ে আলোচনা
করেছেন। এ আলোচনার সূত্র
ধরেই আধুনিক মাইক্রোবায়োলজির যাত্রা শুরু হয়। যে
কোনো ওষুধ এমনকি সার্জিক্যাল
অপারেশন মানুষের দেহে প্রয়োগ করার
আগে তা পশুর ওপর
পরীক্ষা করার সফল প্রচলন
করেন ইবনে জহুর। ১১৬২
সালে জন্মভূমি সিভাইলিতে মৃত্যুবরণ করেন এ মহান
মুসলমান চিকিৎসক। বিভিন্ন ধর্মে তার অনুসারী, গুণগ্রাহী
ও ভক্তের সন্ধান পাওয়া যায়।
@Collected
Nice
উত্তরমুছুন