Header Ads

মুসলিম চিকিৎসা বিজ্ঞানী- ইবনে সিনা


 

                        ইবনে সিনা (৯৮০-১০৩৭) 

চিকিৎসাশাস্ত্র এবং চিকিৎসাবিষয়ক ইতিহাসে এক নক্ষত্রের নাম আবু আলী হুসাইন ইবনে আবদুল্লাহ আল ইবনে আল হাসান ইবনে আলী ইবনে সিনা। তবে বিশ্বজগতে তিনি চিকিৎসাবিজ্ঞানের দিকপাল হিসেবেইবনে সিনানামে সুপরিচিত। ৯৮০ সালে বর্তমান উজবেকিস্তানের বুখারা অঞ্চলের আফসান গ্রামে বাবা আবদুল্লাহ এবং মা সীমারার কোলজুড়ে পৃথিবীতে আগমন ঘটে ইবনে সিনার। বাল্যকালেই তার বিরল প্রতিভা প্রখর স্মৃতিশক্তি সবাইকে সম্মোহিত করে। মাত্র ১০ বছর বয়সে ইবনে সিনা পবিত্র কোরআন মুখস্থ করে হাফেজে পরিণত হন। মাহ্মুদ মাসাহী নামে এক ভারতীয় পন্ডিতের কাছে তিনি অঙ্ক শাস্ত্রে দীক্ষা লাভ করেন। ছাড়াও তৎকালে যারা চিকিৎসা প্রদান করে রোগীদের আরোগ্য লাভে সহায়তা করতেন বা শিশুদের শিক্ষাদান করতেন তিনি তাদেরও শিষ্যত্ব গ্রহণ করে অনেক বিষয়ে জ্ঞান লাভ করেন। অন্যদিকে ইসলাম ধর্মে অনুরক্ত এবং সুন্নি মতবাদে বিশ্বাসী বিধায় ইসলামী বিচারব্যবস্থা, সমাজরীতি ফিকা শাস্ত্রেও তিনি বিশেষ জ্ঞান লাভ করেন। বরাবরই তিনি ছিলেন অনুসন্ধিৎসু মনের অধিকারী। তাই দর্শন যুক্তির পেছনে তিনি অনবরত ছুটেছেন। কথিত আছে যে, গ্রিক দার্শনিক এরিস্টটলের একটি বই তিনি ৪০ বার পড়েছিলেন অর্থ বোঝার জন্য। কোনো কোনো বই বারবার পড়তে গিয়ে বইয়ের অক্ষরগুলোই মুছে গিয়েছিল বলে প্রচলিত আছে। জ্ঞানের একাধিক শাখায় বিচরণ করলেও চিকিৎসাবিজ্ঞানের প্রতি তার ছিল বিশেষ আকর্ষণ। তাই ১৬ বছর বয়সে তিনি চিকিৎসাবিজ্ঞান চর্চায় বিশেষ মনোযোগী হন এবং মাত্র ১৮ বছর বয়সে একজন চিকিৎসক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। চিকিৎসাবিজ্ঞান তার কাছে অঙ্ক কিংবা দর্শনের চেয়ে সহজ মনে হতো। তাই দ্রুতই তিনি প্রচলিত চিকিৎসা পদ্ধতি রপ্ত করে রোগীদের সেবায় নেমে পড়েন। একজন প্রসিদ্ধ ডাক্তার হিসেবে তার সুনাম অল্প সময়ের মধ্যে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। তথাপি তিনি অজু করে রাতভর পড়ালেখা করতেন। আর দিনভর বিনা পয়সায় রোগীদের সেবা করতেন।

 

চিকিৎসক হিসেবে সুনামের কারণে তিনি দ্রুতই প্রশাসনের নজরে আসেন। সময় তিনি ইরান, তাজিকিস্তান, উজবেকিস্তান, কাজাখস্তান, আফগানিস্তান, পাকিস্তান প্রভৃতি অঞ্চল নিয়ে গঠিত তৎকালীন সামানিদ সাম্রাজ্যের প্রধান চিকিৎসক নিযুক্ত হন এবং সাম্রাজ্যের আমির ৯২ বছর বয়সী নূহুর ব্যক্তিগত চিকিৎসক হিসেবে তাকে এবং দুরারোগ্য রোগ থেকে পরিত্রাণ পেতে সাহায্য করেন। ১০০৪ সালে সামানিদ সাম্রাজ্যের পতন ঘটে। নতুন শাসকবর্গের সঙ্গে সখ্য না থাকায় তিনি একে একে বহু অঞ্চলে আশ্রয় নেন। কিছু সময়ের জন্য তিনি যুক্তবিদ্যা এবং জ্যোতির্বিদ্যা বিষয়ে শিক্ষকতা এবং বক্তৃতা করেন। যাযাবর জীবন সত্ত্বেও সময় তিনি বহু বই রচনা করেন। বিভিন্ন কারণে তিনি এই সময়ে নিজের অসুস্থতাসহ বহু প্রতিকূলতা মোকাবিলা করেন। প্রতিকূল পরিবেশের কারণে তাকে আত্মগোপনেও থাকতে হয়। প্রায় ২০ বছর পর এমন বিচ্ছিন্ন বিরূপ পরিবেশের অবসান হয় এবং তৎকালীন বৃহত্তর (ইরান) পারস্য অঞ্চলে প্রতিষ্ঠিত কাকুইদ সাম্রাজ্যের শাসক মোহাম্মদ ইবনে রুস্তম দুশমানজিয়ার একজন চিকিৎসকের মর্যাদায় ইবনে সিনাকে কাছে টেনে নেন। শুধু চিকিৎসকই নন, সম্রাট রুস্তম পর্যায়ক্রমে ইবনে সিনাকে সাহিত্য বিজ্ঞান বিষয়েও উপদেষ্টা নিযুক্ত করেন এবং বিভিন্ন অভিযানকালে তাকে সঙ্গে রাখেন। কিন্তু ক্রমান্বয়ে ইবনে সিনা দুর্বল হতে থাকেন এবং পেটের ব্যথায় কাবু হয়ে পড়েন। শেষ জীবনে তিনি পার্থিব জীবনের সব মায়া ত্যাগ করে ধর্মকর্মে মন দেন। সময় তিনি তার সব সম্পদ গরিবদের বিলিয়ে দেন এবং তার ক্রীতদাসদের মুক্ত করে দেন। কথিত আছে মূলত পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করেই সময় তার দিন কাটত এবং প্রতিদিন তিনি একবার কোরআন খতম করতেন। ১০৩৭ সালের জুন মাসে পবিত্র রমজান চলাকালে ৫৬ বছর বয়সে ইবনে সিনা মৃত্যুবরণ করেন। ইরানের হামাদানে তাকে সমাহিত করা হয়।

 

বহু বিষয়ে বই রচনা করলেও চিকিৎসা বিষয়ে রচিত বই ইবনে সিনাকে অমর করে রেখেছে।আল কানুন ফি ত্বিবতার রচিত একটি মূল্যবান বই। ইংরেজিতে বইটিকেদি ক্যানন অব মেডিসিননামে অনুবাদ করা হয়, যা অষ্টদশ শতকেও চিকিৎসাবিজ্ঞানের অভিকোষ (ইনসাইক্লোপিডিয়া) হিসেবে পাঠ্য হতো। ভেষজ চিকিৎসার ক্ষেত্রে আজও বইটি মূল্যবান অবদান রাখছে। চিকিৎসা বিষয়ে ইবনে সিনার মতবাদ বিশেষতবিরল রোগের নেপথ্যে প্রাকৃতিক কারণেতত্ত্ব আজও আলোচিত হয়। চিকিৎসাবিজ্ঞান ছাড়াও মৃত্তিকাবিজ্ঞান, ভূগোল, বিজ্ঞানের দর্শন, যুক্তিবিদ্যা, পদার্থবিদ্যা মনোবিজ্ঞানের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তিনি বহু বই তত্ত্ব লিখে গেছেন। যা পৃথিবীর মূল্যবান সম্পদ। জ্যোতির্বিদ্যা কিংবা রসায়নের মতো জটিল বিষয়েও তার বিচরণ ছিল। অন্যদিকে তার কাব্য প্রতিভাও ছিল ঈর্ষণীয়। ইবনে সিনার নামে পৃথিবীর বহু দেশে মেডিকেল কলেজ, ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান (ফার্মেসি), ছাত্রাবাস প্রভৃতি নির্মিত হয়েছে। বিভিন্ন দেশের ডাকটিকিটেও তাকে খুঁজে পাওয়া যায়। অস্ট্রেলিয়ার দফতরে ইবনে সিনার ভাস্কর্য ঠাঁই পেয়েছে। তার একটি বিখ্যাত উক্তি হলো- ‘এই দুনিয়ার লোকেরা দুই দলে বিভক্ত। এক দলের ধর্ম নেই কিন্তু বুদ্ধি আছে। আরেক দলের বুদ্ধি নেই কিন্তু ধর্ম আছে।

 

 @Collected

 


1 টি মন্তব্য:

Pls

Storman থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.